Blog

কালের সাক্ষী প্যাডেলচালিত স্টিমার

ব্রিটিশ সরকারের শাসন আমল, এই সময়ে বাংলার নৌপথে প্রথম চালু হয় প্যাডেলচালিত স্টিমার

ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমারে ভ্রমণ করেছিলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিশ্ববরেণ্য অনেক ব্যক্তি
কালের সাক্ষী প্যাডেলচালিত স্টিমার। যা নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘রকেট’ বা ‘কমলা রকেট’ হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, মেঘনা, ডাকাতিয়া, কীর্তনখোলা, সুগন্ধা, বিষখালী, গাবখান, সন্ধ্যা, কচা, বলেশ্বর, মংলা, পশুর ও রুপসা চষিয়ে বেরিয়েছে নৌযানগুলো, নিরলস সেবা প্রদান করেছে যাত্রীদের। বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল নদীতে নির্বিঘ্নে যাতায়াতে এসব নৌযান ভরসা ছিল দক্ষিণাঞ্চলবাসীর।
সময়টা ছিল ১৮৮৪। ব্রিটিশ সরকারের শাসন আমল। এই সময়ে বাংলার নৌপথে প্রথম চালু হয় প্যাডেলচালিত স্টিমার। যার জ্বালানি ছিল কয়লা। নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠী হয়ে মোরেলগঞ্জ ও খুলনা পর্যন্ত চলতো। পরে ফ্লোটিলা নামের আরেকটি কোম্পানি প্রায় ১৪টি স্টিমার নিয়ে আসে। পণ্য পরিবহণ ও যাত্রী চলাচলে ব্যবহৃত হতো এসব প্যাডেল স্টিমার।
বাংলাদেশ যে কয়েকটি প্যাডেলচালিত স্টিমার চলাচল করতো এরমধ্যে একটি ছিল ‘প্যাডেল স্টিমার লেপচা’ বা ‘পি এস লেপচা’। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয় ১৯০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট স্টিমারটিকে। শুরুতে স্টিম (বাষ্পীয়) ইঞ্জিনে চলাচল করলেও ১৯৮৬ সালে ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তর করা হয় নৌযানটিকে। প্রথম দিকে স্টিমারটির প্যাডেলসহ অনেক অংশ আগে কাঠের ছিল। পরে এগুলো স্টিলের করা হয়।
এর পরের গল্পটা আমাদের সবারই জানা। ঝড়-বৃষ্টি, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দেশের নৌ সেক্টরে যাত্রীদের সার্ভিস দিয়ে গেছে পি এস লেপচা, দাপিয়ে বেড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী। সবশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধ হয়ে গেছে জনপ্রিয় প্যাডেল স্টিমার সার্ভিস।
ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমারে ভ্রমণ করেছিলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিশ্ববরেণ্য অনেক ব্যক্তি। যাত্রীর অভাবে বর্তমানে আর চলাচল করছে না প্যাডেল স্টিমার। আর কোনো দিনও ভেঁপু বাজিয়ে নদীর বুক চিরে চলতে দেখা যাবে না শতবর্ষী নৌযানগুলোকে।
Blog Author

Md Abdul Gaffer

Written by

RECIPE REVIEWS

Login to comment