Blog

আমরা আছি, 'স্যার ও সালামতন্ত্রের' সময়ে

বায়ান্ন বছরে একাত্তরের কোন চেতনা বাস্তবায়িত হয় নাই। বরং, আমরা 'স্যার ও সালামতন্ত্র', আঞ্চলিকতা, গোষ্ঠীপ্রীতি মোটামুটিভাবে প্রতিস্থাপন করে ফেলেছি

'স্যার ও সালামতন্ত্রের' সাথে সাথে 'আঞ্চলিকতার' মতো ইতরামোর পতন প্রত্যাশা করি
মাথার তেল নেমে এসেছে জিভে ও হাতে। তবে, এই তেল শুধু আমলাদের দখলেই নেই এখন। তেল দখলে এসেছে সুবিধাবাদী, ধান্ধাবাজ, অসৎ মধ্যবিত্ত'র হাতেও। এরা আপ্রান চেষ্টায় ব্রত তাদের ওপরে থাকা বর্বর, ক্ষমতাবান পশুটির দৃষ্টি আকর্ষণের। জাতির বিবেক সেজে সবাইকে নসিহত করে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণের গন্ধময় চেষ্টায় ব্রত এরা। বর্তমানে সমাজের প্রতি স্তরে এসবের বিকট প্রকাশ দৃশ্যমান।
স্বাধীনতা অর্জনের বায়ান্ন বছরে, বৈষম্যটা দৃষ্টিকটুরকমের না হলে, জীবনটা আরেকটু সুন্দর হতো। ওইসব বাহ্যিক চাকচিক্য আর জৌলুস যখন থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠের আরাধ্য হয়ে উঠেছে এবং হৃদয়বৃত্তিক মননশীল চর্চাগুলো গুরুত্ব হারিয়েছে,তখন থেকে বাস করছি শতধা বিভাজিত সমাজের পঙ্কিলতায়।
আমরা আছি, 'স্যার ও সালামতন্ত্রের' সময়ে। 'স্যারতন্ত্র' সবাই বুঝতে পারলেও 'সালামতন্ত্র' অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না। দারোয়ান অথবা পিয়নের সালামের প্রতিউত্তর ছোট স্যারেরা দেন না, ছোট স্যারদের সালাম আবার মাঝারি স্যারেরা নেননা, মাঝারি স্যারদের সালাম বড় স্যারেরা নেননা।
সালাম পেলে তাঁদের 'চাঁদবদন', দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের পাছার মতো শক্ত হয়ে যায়। বড় স্যারদেরও অবশ্য স্যার আছে, ওনারা আবার সমাজের সেই লেভেলের চিড়িয়া, বড় স্যারদেরও পাত্তা দেন না।
'সালামতন্ত্র', বাংলাদেশের সৎ ও ধর্মপরায়ণ নাগরিকদের মননে ও চর্চায় 'পা থেকে মাথা' অবধি গেঁথে গেছে।
'একাত্তরের চেতনার বাস্তবায়ন', কথাটি আমরা শুনি প্রতিনিয়ত। কিন্তু কেউই বলছিনা, বায়ান্ন বছরে একাত্তরের কোন চেতনা বাস্তবায়িত হয় নাই। বরং, আমরা 'স্যার ও সালামতন্ত্র', আঞ্চলিকতা, গোষ্ঠীপ্রীতি মোটামুটিভাবে প্রতিস্থাপন করে ফেলেছি।
এর শুরুটা কিন্তু বাচ্চাকালেই হয়, বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও জানতে চান, 'অ্যাই তোমার বাড়ি কোথায়'। বুদ্ধিসম্পন্ন কোন শিক্ষার্থী যদি বলে, 'বাংলাদেশ'। তিনি (শিক্ষক) বলবেন, 'আহা তোমার গ্রামের বাড়ির কথা জানতে চাইছি'। শিক্ষার্থীর দাদা অথবা নানাবাড়ি যদি 'জিলাপি' হয় তাহলে সেই শিক্ষার্থী মোটামুটি শিক্ষকের নেকনজরে থাকবে। আর যদি 'রসগোল্লা' এলাকায় হয় তাহলে দৃষ্টির বাইরে চলে যাবে।
অথবা, শিক্ষকেরা জানতে চান 'অ্যাই তোমার আব্বা হুজুরের পেশা কি?', তো সেই ছাত্রের 'আব্বা হুজুর', যদি 'বড় হুজুরদের' কেউ হন তাহলে 'সাত খুন মাফ'। কিন্তু জন্মের আগেই করে ফেলা পাপের ফলে যদি তাঁর 'আব্বা হুজুর' কৃষক অথবা মুচি হন, তাহলে মোটামুটি 'দফারফা' হয়ে যাবে।
আমাদের সব্বাইকে সেই শৈশব থেকে শেখানো হয়, 'হাত কচলানো'।
বাংলাদেশের নাগরিক' হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে বেগ পেতে হলেও, 'স্যার ও সালামতন্ত্র' এবং 'আঞ্চলিকতাবাদ' - ভুক্ত আদম হতে পারেন তবে সাফল্য সুনিশ্চিত।
এর বাইরে, বাংলাদেশে আপনি 'রবিনসন ক্রূসো'।
'স্যার ও সালামতন্ত্রের' সাথে সাথে 'আঞ্চলিকতার' মতো ইতরামোর পতন প্রত্যাশা করি।
Blog Author

Md Abdul Gaffer

Written by

RECIPE REVIEWS

Login to comment