Blog

বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় দশটি পেশা

বর্তমানে বিনোদন জগৎ সম্প্রসারিত হওয়ার কারণে অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে এই পেশাগুলো।

বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় দশটি পেশা
১. ধুনারি:
তুলা ধুনা একটি অতি প্রাচীন পেশা। তুলা ধুনা করা পেশাজীবীরা লেপ, বালিশ ও তোষক প্রস্তুত করতেন। অতীতে তারা গ্রামে-শহরে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তুলা ধুনা এবং লেপ, বালিশ ইত্যাদি তৈরির কাজ করতেন।
২. নৈচাবন্দ ও টিকাওয়ালা:
হুঁকা এক সময় খুব জনপ্রিয় ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হুঁকা নামের ধূমপানের বস্তুটি হারিয়ে গেছে। কিন্তু একসময় ঢাকা শহরেই ছিল উপমহাদেশের বৃহত্তম হুঁকা বানানোর শিল্প। হুঁকার নল যারা বানাতো তাদের বলা হতো 'নৈচাবন্দ'।
৩. পাঙ্খাওয়ালা:
হাতপাখা নির্ভর এই পেশাজীবীরা অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। রাজা-জমিদারদের আমলে এই পেশাজীবীদের অনেক কদর ছিল। বড় আকারের তালপাখার নাম ছিল আরানি, ছোটগুলোর নাম আরবাকি।
৪. গোয়ালা:
এক সময় ঢাকা শহরে গোয়ালাদের বসবাস ছিল। তারা গরু লালন-পালন করত এবং শহরবাসীর নিকট দুধ সরবরাহ করত। দুধ সরবরাহ ছাড়াও তারা দুধ দিয়ে ঘি, দই,ছানা তৈরি করত। ঢাকার মিষ্টি তৈরিকারকরা দুধের জন্য গোয়ালাদের উপর দারুণভাবে নির্ভরশীল ছিল।
৫. বাইজি:
বিশেষ ধরনের জীবনযাপন, কঠোর পর্দার মধ্যে বসবাস এবং প্রহরীদের প্রহরায় ঘোড়াগাড়িতে যাতায়াত করতেন বাইজিরা। এ কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাইজিদের সম্পর্কে অনেক কৌতূহল ছিল।
৬. ভিস্তিওয়ালা:
১৮৭৮ সালে ঢাকা শহরে আধুনিক সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়। এর আগে ঢাকায় খাবার পানির উৎস ছিল পুকুর, কুয়া, নদী। সে সময় কিছু লোক টাকার বিনিময়ে মশকে (চামড়ার ব্যাগ) করে ঢাকা শহরের বাসায় বাসায় খাবার পানি পৌঁছে দিতেন। এ ধরনের পেশাজীবীদের বলা হত 'ভিস্তিওয়ালা' বা 'সুক্কা'।
৭. রানার:
চিঠির গুরুত্ব অনেকটাই কমে এসেছে। টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, টেলিফোনের পর ইন্টারনেট পরিষেবা আসার পর ই-মেইল। চিঠির প্রয়োজনীয়তা তাই দিনদিন কমে আসছে। আর চিঠির গুরুত্ব কমে আসায় কমে গেছে এই মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত মানুষদের গুরুত্বও। সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'রানার' কবিতার দৌলতে সেরকম একটি পেশার সঙ্গে আমাদের পরিচিতি ভালোই। কোন সময় থেকে রানারদের এই 'দৌড়' শুরু, তা সঠিক জানা যায় না। তবে মনে করা হয়, মোটামুটি মুঘল যুগের সময় থেকেই এই ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার সূচনা।
৮. পালকি বেহারা:
পালকি ছিল এক সময়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন বাহন। মানুষ বহন করার কাজেই এর ব্যবহার হতো। সাধারণত ধনীগোষ্ঠী এবং সম্ভ্রান্ত বংশের লোকেরা এর মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করতেন। বিয়েতে ব্যবহৃত হতো পালকি। কিন্তু এখন তা প্রায় পুরোপুরি বিলুপ্ত।
৯. সাপুড়ে:
মোগল ঢাকা তো বটেই, ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত ঢাকায় জলা-জঙ্গলের অভাব ছিল না। ফলে সাপও ছিল প্রচুর। সাপুড়েও ছিল। তবে মূল শহর থেকে এই পেশা হারিয়ে গেছে। তাদের কাজ ছিল বাড়ি থেকে সাপ বের করা। বিশেষ করে গ্রামে বর্ষার শেষে সাপের প্রকোপ বেড়ে যেত।
১০. দাস্তানগড়িয়া:
এদের কাজ ছিল মূলত গল্প বলা। লোক সরগম হয় এরকম জনবহুল জায়গায় দাঁড়িয়ে গল্প বলতেন আর মানুষ দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে তা শুনতেন। রাজা বাদশার গল্প বা লৌকিক উপকথা সুন্দর বাচনভঙ্গির মাধ্যমে তারা শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন।
Blog Author

Md Abdul Gaffer

Written by

RECIPE REVIEWS

Login to comment